আবু সুফিয়ান :: হিজরি_নববর্ষ১৪৪৪ মুসলিম জাতির জন্য এক অনন্যোজ্জ্বল গৌরবগাঁথা ও ঐতিহাসিক দিন। নিজেদের অস্তিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই দিনটি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে নব চেতনায় উদ্দীপ্ত করে। মানবতার মুক্তির জন্য যে মহামানব আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হয়ে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহেলিয়াতে পূর্ণ ধ্বংস পদযাত্রী মৃতপ্রায় এই মানব জাতিকে মুক্তির পথ দেখাতে এসেছিলেন সেই মুক্তির দিশারি মহামানব রহমাতুল্লিল আলামীনকে পর্যন্ত ওরা হত্যার ষড়যন্ত্র করলো!!সেই ভয়াল ষড়যন্ত্রের রজনীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশ প্রাপ্ত হয়ে নিরস্ত্র একা এক আবুবকর রাঃকে সাথী করে অন্ধকারের ভিতর দিয়ে যেই মহা পদযাত্রা করেছিলেন সেই ভয়াল রজনী থেকে গণনা শুরু করে সময়ের পরিক্রমায় তা আজ ১৪৪৩ বছর পার করে ১৪৪৪তম বছরে পদার্পণ করেছে।
বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। আরবি নববর্ষের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকা সত্ত্বেও উল্লেখ করার মতো কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না বললেই চলে। এর জন্য আমরা মুসলিমরা দায়ী। হিজরি বছরের শেষ মাস তিন চার এবং শুরুর মাস অনেক মর্যাদা ও ফজিলতের মাস। তাই এ হিজরি বছরের শেষ এবং নতুন বছরের প্রথম রাত ও দিন বিগত দিনের গোনাহ মাফ এবং আগামী দিনের কল্যাণ লাভের এক মর্যাদপূর্ণ সময়। আসুন আগামী থেকে আমরা এই দিনটি যথাযথভাবে উদযাপন করি।’
‘আরবি বছরে মহররম হচ্ছে প্রথম মাস,একটি পবিত্র মাস। সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাসগুলোর সংখ্যা হল বার। এর মধ্যে বিশেষ রূপে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত”। মহররম এই চারটি মাসের একটি। একই আয়াতে পরের অংশে আল্লাহ বলেন, “Do not wrong your souls in these months” অর্থাৎ তোমরা এই মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার কোরো না। (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬
তাই আমাদের উচিত এই মাসে সকল Major Sins,গুরুতর পাপ থেকে নিজেদের বিরত রাখা।
মহানবী (স) বলেছেন – أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ – The most excellent fasting after Ramadan is in the Month of Allah “Al-Muharram”. খেয়াল করুন, মহানবী (স)এই মাসকে বলেছেন Month of Allah. অন্যকোন মাসকে কিন্তু شَهْرُ اللَّهِ বা Month of Allah বলা হয়নি। তাই, এমাসের সম্মান অনেক বেশী। আর সে জন্যই মহানবী (সা) এর জীবনাবসানের দশ বছর পর ওমর (রা) যখন এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন, তখন মহররমকে প্রথম মাস হিসেবে স্থান দেয়া হয়।
আরবি নববর্ষেকে সামনে রেখে আমরা আমাদের আমলের অগ্রগতি, পরস্পরের মধ্যে সাম্য, সম্প্রতি, ন্যায় ইনসাফ এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নেয়া উচিৎ। নতুন সময় নতুন পদক্ষেপ উপলক্ষে মানুষের হৃদয়ও নতুন ভাবে সজীব হয়ে ওঠে,একটা নতুনত্ব কাজ করে হৃদয়ে। আমরা যদি হৃদয়ের সেই নতুনত্বের মাঝে শুদ্ধতা ন্যায় ইনসাফ এর দৃঢ় শপথ নিতে পারি তাহলে আগামী বছর হবে আমাদের জন্য
শ্রেষ্ঠ একটি বছর,নিজের আমল এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার আসবে সুবিশাল পরিবর্তন। টকবছর একবছর করে মৃত্যু আমাদের নিকটবর্ত্তী হয়ে আসতেছে সুতরাং
নতুন বছরকে কেন্দ্র করে আমরা কি এই শপথ নিতে পারি যে
১/নামাজ আর করবোনা কাজা,
২/গান বাজনা,সিনেমা নাটক সহ ছেড়ে দেবো সবধরনের নেশা,
৩/ পিতা-মাতার আনুগত্য করবো,
৪/ আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখবো,
৫/কাওকে কষ্ট দেবোনা,
৬/ সকল ধরনের গোনাহের কাজ ছেড়ে দেয়ার শপথ।
সবধরনের গুনাহ জীবন ধ্বংসের কাজ, গুনাহ মানুষের জীবনে সংকীর্ণতা এবং দুঃখ কষ্ট ডেকে আনে!! আল্লাহ বলেন “আর যে আমার স্বরণ থেকে বিমুখ হয় তার জীবন সংকীর্ণতা এবং দুঃখ কষ্টে ভরপুর হয়ে যায় ” সূরা তহা আয়াত ১২৪,, আল্লাহর স্বরণ বলতে সব কাজই আল্লাহর হুকুম আহকাম মতো করা,গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, অর্থাৎ
আল্লাহর জিকির করলে আল্লাহকে স্বরণে রাখলে আপনি কি কখনো গান নাটক সিনেমা কিংবা অন্য যেকোনো পাপের কাজের সময় জিকির করবেন!!নিশ্চয়ই নয়।এজন্যই আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর স্বরণ ছাড়া দুঃখ কষ্টে ভরপুর জীবন।গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকবেন,আপনার রিজিক সংকীর্ণ হবে!!আপনার জীবনে বিপদ মুসিবত আসতেই থাকবে।এজন্য নতুন বছরের শপথ হোক সব ধরনের গুনাহের কাজ পরিহার করার।
“নতুন হিজরী বছরটি সকলের জন্য মঙ্গল ও কল্যাণ এবং শান্তিময় হোক, সকলের জন্য বয়ে আসুক সুখ সম্মৃদ্ধি, এই প্রার্থনা করছি আল্লাহ তায়ালার কাছে।
হিজরি নববর্ষের প্রথম এ মাসে দুনিয়া সৃষ্টি থেকে নিয়ে ইসলামের ইতিহাসে অনেক ঘটনাবলী ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। এমনকি এই দিনেই আল্লাহ এই পৃথিবীকে ধ্বংস করবেন অর্থাৎ কেমাত সংঘটিত করবেন। ‘
ফিরে এলো আজ সেই মুহাররম মাহিনা, ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা।’
বিদায়ী হিজরি বছরের শেষ দিনের সূর্য অস্তমিত হচ্ছে।।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে একটাই প্রার্থনা তিনি যেনো আমাদের জীবনের বিগত বছরের সকল পাপ রাশি ক্ষমা করে দেন।এবং আগামি বছরটি যেনো আমাদের জন্য আরো সুন্দর এবং সাফল্য মণ্ডিত করেন।
এবং আমাদের সদাসর্বদা তাহার দেয়া সিরাতুল মুসতাক্বিমের পথে পরিচালিত করেন।
লেখকঃ (প্রবাসী সমাজকর্মী,সৌদি আরব)